মিলিবাগ অত্যান্ত ক্ষতিকর একটি পোকা যা প্রায় সব ধরনের ফল ,শাক সবজির গাছে হয়ে থাকে ।এই পোকা গুলো ধীরে ধীরে পুরো গাছ এমনকি পুরো বাগানে ছড়িয়ে পরে ।শুধু তাই নয় বাসা বাড়িতেও ছড়িয়ে পরতে পারে। তাই প্রথমিক পর্যায়ে দমনে ব্যবস্থা না নিলে পরবর্তীতে দমন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
মিলিবাগ পোকা আম,জাম, কাঁঠাল,পেয়ারা,বট,কড়ই,লেবু ও পেঁপেসহ ৬২ প্রজাতির গাছে আক্রমণ করে থাকে। জায়ান্ট মিলিবাগের জীবন চক্রের অপ্রাপ্তবয়স্ক (নিম্ফ দশা) অবস্থায় স্ত্রী পোকা ক্ষতি করে থাকে।
মিলিবাগ পোকা চেনার উপায়:
স্ত্রী নিম্ফ দেখতে ডিম্বাকার, চেপ্টা এবং এদের শরীর সাদা পাউডার জাতীয় পদার্থ দ্বারা আবৃত থাকে।
ক্ষতির ধরণ:
মিলিবাগ পোকা গাছের বাড়ন্ত ডগা এবং মুকুল থেকে রস চুষে খায় এতে কচি ডগা ও মুকুল শুকিয়ে যায় এবং ফল ধারন বাধা সৃষ্টি করে। ফল ধারণ করলেও খুবই দুর্বল হয়, সামান্য বাতাসেই কচি ফল ঝড়ে পড়ে। সাধারণত এরা দলবদ্ধভাবে থাকে এবং ডগা ও মুকুলের বোঁটায় এমনভাবে গাদাগাদি করে থাকে যে আক্রান্ত ডগাটিই আর দেখতে পাওয়া যায় না।ছত্রাকের কলোনী তৈরী হওয়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে যা সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় মারাত্নক প্রভাব ফেলে যার ফলে ফলের উৎপাদন কমে যায়, নিম্ফ এবং প্রাপ্ত বয়স্ক পাতা হতে রস চুষে নেয় যার ফলে পাতা হলুদ ও পাতা নুয়ে পড়ে এবং ঝরে পড়ে যায় এবং ফল গাছ থেকে খসে পড়ে। এমনকি পুস্প আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
মিলিবাগ পোকা দমনের উপায়:
ঘরোয়া পদ্ধতি
০১. বাগানের আগাছা নিয়মিত পরিষ্কার করা।
০২. গাছের গোড়ায় মাটি থেকে ১ মিটার উঁচুতে ৮-১০ ইঞ্চি চওড়া প্লাস্টিকের পিচ্ছিল ব্যান্ড গাছের চতুর্দিকে আবৃত করে দিলে নিম্ফগুলোকে গাছে উঠতে পারবেনা। এসময় নিম্ফগুলোকে গাছে উঠা হতে নিবৃত করতে পারলে এ পোকার আক্রমণ পুরোপুরিভাবে দমন করা সম্ভব।
০৩. সাবানযুক্ত পানি স্প্রে করা যায় অথবা আধাভাঙ্গা নিমবীজের পানি (১ লিটার পানিতে ৫০ গ্রাম নিমবীজ ভেঙ্গে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে ছেঁকে নিতে হবে) আক্রান্ত গাছে ১০ দিন পর পর ৩ বার স্প্রে করলে পোকা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এছাড়া ও নিম তেল স্প্রে করে উপকার পাওয়া যায়।
০৪. নভেম্বর মাসের শুরুতে পূর্ণাঙ্গ স্ত্রী পোকা গাছের গোড়ার চারিদিকের মাটিতে ডিম পাড়ে তাই মাটি (গাছ হতে ২ মিটার পর্যন্ত) কুপিয়ে তাতে “ঝিনুক চুন” ৫ লিটার পানিতে ১ চা চামচ ভাল ভাবে মিশিয়ে মাটিতে গাছের জন্য যতটুকু দরকার ততটুকু প্রয়োগ করতে হবে। এতে মাটিতে বিদ্যমান ডিম ও সদ্য প্রস্ফুটিত বাচ্চা চুনের পানির সংস্পর্শে মারা যাবে।
০৫. বাড়িতে আপনি একটি আস্ত ছোট রসুন, একটি ছোট পেঁয়াজ, ১ চা চামচ আস্ত গোল মরিচ ভালো করে বেটে পেস্ট করে মিশ্রণটি কে পুনরায় ব্লেন্ডার মেশিনে ভাল করে ব্লেন্ড করে, এই মিশ্রনটি ১ লিটার পানিতে গুলিয়ে তার সাথে ১ টেবিল চামচ “ট্রিকস”লিকুইড ডিসওয়াশ যোগ করে সকালে বোতল ভরে রেখে দিতে হবে। শেষ বিকেলে বোতল জাত মিশ্রনটি চা এর পরিস্কার ছাকনি দিয়ে ছেকে প্রাপ্ত তরলটুকু গাছের ডালে, পাতার নিচে উপরে স্প্রে করতে পারেন।
রাসয়নিক কীটনাশক:
০১. পরীক্ষিত কীটনাশক ছাড়া এটি দমন করা দুরূহ।এ ক্ষেত্রে প্রথমে ক্লোরপাইরিফস (ডারসবান ২০ ইসি বা এ জাতীয় কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ৩ মিলি. হারে) এবং তার ৩-৪ দিন পর কার্বারাইল (সেভিন ৮৫ এসপি বা এ জাতীয় কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে) আক্রান্ত অংশে স্প্রে করতে হবে। প্রতি ১৫ দিন অন্তর ২-৩ বার এভাবে স্প্রে করলে এ পোকা সম্পূর্ণভাবে দমন করা সম্ভব।
পুনরায় যেনো মিলিবাগ পোকার আক্রমন না হয় সে জন্য মিলিবাগ পোকা মারা গেলে আক্রান্ত পাতা ও ডগা ছাঁটাই করে তা পুড়িয়ে ফেলুন এবং মাটিতে পুতে ফেলুন।
আরো বিস্তারিত জানতে/বাগান সম্পর্কে জানতে ফ্রি কনসালটেশনের জন্য কল করুন– 01812164069.